কোরবানির পশুরদাম নিয়ে চিন্তা

প্রকাশঃ সোমবার ১৯ জুন, ২০২৩
সরকারি হিসাবে এ বছর কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি, যেখানে সম্ভাব্য চাহিদার তুলনায় ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪টি পশু বেশি রয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কোরবানিযোগ্য পশু থাকলেও দামে স্বস্তি মিলছে না এবার। এ নিয়ে খামারি ও ক্রেতা উভয়ই উদ্বিগ্ন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার খামারিরা বলছেন, গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এ বছর কোরবানির পশু কিনতে হবে গত বছরের চেয়ে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি দামে। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গার জাহাপুর গ্রামের খামারি মো. আউয়াল-উজ-জামান জানান, তার কাছ থেকে বেপারিরা গরু কিনে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা শহরে বিক্রি করেন। এ বছর কোরবানির জন্য তিনি ১৭৮টি গরু প্রস্তুত করেছেন। এর মধ্যে ১৬০টি বিক্রি হয়ে গেছে। গতবার যে গরু ৭০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি, এবার তা প্রায় ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। অপরদিকে বড় গরুর দামও ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়তি রয়েছে। এবার বগুড়ার আর কে এগ্রো অ্যান্ড ফিশারিজের তরুণ খামারি মো. রাহাত খানেরও বড়-মাঝারি আকারের মিলিয়ে ১০৫টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে। তিনি বলেন, খরচ অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় দামও বাড়াতে হয়েছে। গতবারের চেয়ে এ অঞ্চলে এবার দাম ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তি রয়েছে। ১৭০ কেজি ওজনের গরু এবার বিক্রি করেছি ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকায়। সবচেয়ে বড় গরু (১ টন ওজনের) গরু বিক্রি করেছি ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত। গতবারের চেয়ে এবার প্রতিমণ মাংসে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। আউয়াল ও রাহাতের মতো পাবনার গয়েশপুর ইউনিয়নের জালালপুর গ্রামের খামারি মো. রাজু আহমেদও জানান এবার দাম ২০ শতাংশের বেশি বাড়তি রয়েছে। চাহিদা ভালো থাকলেও বাড়তি দামের কারণে শেষমেশ কতগুলো গরু বিক্রি করতে পারবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তিনি। কেবল খামারিরাই নন, কোরবানি পশুর বাড়তি দাম নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন সাধারণ মানুষও। মূল্যস্ফীতির পরিস্থিতিতে সাধ্যের মধ্যে পছন্দের কোরবানির পশু কিনতে পারবেন কিনা তা নিয়ে ভাবছেন তারাও। বেসরকারি চাকরিজীবী মো. শেখ মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছরই শুনি চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। অথচ হাটে গিয়ে বেশি দামেই কিনতে হয়। এখন তো এমন হারে দাম বাড়ে যে সাধ্যের মধ্যে পছন্দের পশু কিনতে আমাদের মতো মধ্যবিত্তের হিমশিম খেতে হয়। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি মাসের শেষে উদযাপিত হবে ঈদুল আজহা। এ বছর কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫২টি গরু-মহিষ, ৭৬ লাখ ৯০ হাজার ছাগল-ভেড়া এবং ২ হাজার ৫৮১টি অন্যান্য প্রজাতির গবাদিপশু রয়েছে। এদিকে রাজধানীর আধুনিক খামারগুলোতেও এবার কোরবানির পশুর দাম বেড়েছে বলে জানান বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি মো. ইমরান হোসেন। তিনি বলেন, খামারগুলোতে লাইভ ওয়েট হিসাবে কেজিপ্রতি ২৫ টাকা দাম বেড়েছে। আমরা খামারিরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এ বছর লাইভ ওয়েট হিসাবে প্রতি কেজি ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করব। গতবার যা ছিল ৪৭৫ টাকা। মূল্যস্ফীতির বাজারে এ দামে অনেক খামারি অসন্তুষ্ট হলেও আমরা ৫ শতাংশ দাম বাড়িয়েছি। অপরদিকে হাটগুলোতে অন্তত ১০ শতাংশ দাম বাড়তি থাকবে। হাটগুলোতেও লাইভ ওয়েটে পশু বিক্রি করলে অতিরিক্ত দাম নেওয়ার সুযোগ থাকবে না। দাম বাড়ার পেছনে গোখাদ্যের লাগামছাড়া দাম অন্যতম প্রধান কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক বছরে গোখাদ্যের দাম প্রকারভেদে ৫০ থেকে ১২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। গোখাদ্যের অত্যাধিক দামে নাজেহাল জামালপুরের মেলামদর উপজেলার সাদিবাটি গ্রামের প্রান্তিক খামারি মো. নিপুণ হোসেন বলেন, এক বছরে প্রতি গরুর পেছনে অন্তত ১৫০ টাকা খরচ বেড়েছে। এ খরচ সামাল দেওয়া কঠিন। তাই এবার বিক্রির জন্য মাত্র তিনটি গরু প্রস্তুত করেছি। গতবার যেখানে ৯টি গরু বিক্রি করেছি। খামারি আউয়ালও বলেন, গোখাদ্য, শ্রমিক মজুরি, বিদ্যুৎ বিলসহ সবকিছু মিলিয়ে গত বছর যেখানে প্রতি গরুর পেছনে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা ছিল, বর্তমানে তা বেড়ে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি গরুর পেছনে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত খরচ বেড়েছে। যার প্রভাব দামেও পড়বে।