প্রকাশঃ সোমবার ১৯ জুন, ২০২৩
দেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার যুক্তরাষ্ট্র। মোট পোশাক রপ্তানি আয়ের ২২ শতাংশই আসে দেশটি থেকে। গুরুত্বপূর্ণ এ বাজারটি ধরে রাখা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে রপ্তানি কমছেই। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে মাস পর্যন্ত গেল ১১ মাসে রপ্তানি কমেছে ৫ শতাংশেরও বেশি। অথচ একই সময়ে অন্যান্য দেশে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে বড় অঙ্কের। এ সময় সার্বিক পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১১ শতাংশেরও বেশি।
তবে সবচেয়ে বড় বাজারে রপ্তানি কমে আসায় উদ্যোক্তারা উদ্বিগ্ন। তবে কী কারণে রপ্তানি কমছে তা বুঝে উঠতে পারছেন না তাঁরা। বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলেছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। এতে চাহিদা ব্যাপক হারে কমেছে। বিশেষ করে আমদানি করা পণ্যের চাহিদা এখন অনেক কম। এ কারণে রপ্তানি কমে থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ রাজনীতির সঙ্গে রপ্তানি কমে যাওয়ার সম্পর্ক আছে বলে মনে করেন না তাঁরা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ৭৭৩ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ পরিমাণ ছিল ৮১৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ, রপ্তানি কমলো ৪২ কোটি ডলার। দেশের মুদ্রায় যা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। রপ্তানি কমে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশের পোশাক আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের হিস্যাও কমছে। ২২ শতাংশ থেকে কমে এখন ১৮ দশমিক ১৪ শতাংশে নেমে এসেছে।
এ বিষয়ে গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান সমকালকে বলেন, গত প্রায় ৩৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা হিসেবে নীতি সুদহার বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ। এ কারণে চাহিদা কমে এসেছে সেখানে। বিশেষ করে আমদানি করা পণ্যের চাহিদা অনেক কম। মূলত এ কারণেই পোশাক রপ্তানি কমছে। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই বলেই মনে হচ্ছে। কারণ, সারাবিশ্ব থেকেই আমদানি কমিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া অন্য কোনো দুর্বলতা আছে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা ছাড়াই প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগোচ্ছে দেশের রপ্তানিকারক উদ্যোক্তারা। তুলনামূলক অনেক কম বাণিজ্য সহায়ক অবকাঠামো এবং পরিবেশের মধ্যেও প্রতিযোগিতা করে টিকে আছেন তাঁরা।
যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটেক্সা) হালনাগাদ তথ্য থেকে জানা যায়, পঞ্জিকা বছরের হিসাবে জানুয়ারি থেকে গত এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে বস্ত্র ও পোশাক আমদানি কমেছে ২২ শতাংশ। এ চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে ১৮ শতাংশ। চীনের কমেছে ৩২ এবং ভিয়েতনামের কমেছে ২৭ শতাংশ। পরিমাণে বেশি রপ্তানির দিক থেকে চীনের অবস্থান এখনও প্রথম। ভিয়েতনাম দ্বিতীয় এবং বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়।
পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সমকালকে বলেন, রপ্তানি কমে আসার সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। যত কিছুই হোক পোশাক আমদানিতে কোনো ধরনের চাপ দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, চীনের সঙ্গে তাদের বাণিজ্যিক বৈরী সম্পর্কের কারণে সে দেশ থেকে পোশাক বেশি নিচ্ছে না। বাংলাদেশ থেকেও পোশাক না নিলে মার্কিনিদের পোশাক না পরে থাকতে হবে। তাহলে রপ্তানি কেন কমছে– এ প্রশ্নে তিনি বলেন, সঠিক কারণ তাঁরাও বুঝে উঠতে পারছেন না। সবচেয়ে বড় বাজারে রপ্তানি কমে আসার বিষয়ে তাঁদের মধ্যে উদ্বেগ আছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থাও কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করছে।
পরিসংখ্যান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি কমলেও বেড়েছে অন্যান্য দেশে। ২৭ জাতির জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। রপ্তানি হয় ২ হাজার ১২২ কোটি ডলারের পোশাক। আগের একই সময়ে এ পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৯৩০ কোটি ডলার। যুক্তরাজ্যে ১২ এবং কানাডায় রপ্তানি বেড়ছে ১৮ শতাংশ। সবচেয়ে ৩৩ শতাংশ রপ্তানি বেড়েছে অপ্রচলিত বাজারে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইইউ ও যুক্তরাজ্য ছাড়া পৃথিবীর বাকি দেশগুলোকে অপ্রচলিত বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারতসহ ১৫টি দেশ এ শ্রেণির বড় বাজার।