প্রকাশঃ সোমবার ১৯ জুন, ২০২৩
দেশে দ্রুত বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যু। ডেঙ্গুর মূল মৌসুম শুরুর আগেই অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সর্বোচ্চ ৪ হাজারের বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরই মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৯ জনের। এমন পরিস্থিতিতে রোগটির জীবাণুবাহী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমে ঘাটতির কথা বলেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। তবে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা এমন অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁদের ভাষ্য, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কোনো ত্রুটির কথা কখনও স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে যথাযথভাবে জানানো হয়নি। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, মশা নিয়ন্ত্রণে বছরজুড়েই তারা যথেষ্ট শক্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে থাকে। এদিকে, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে কোনো গাফিলতি, অজুহাত কিংবা একে অপরকে দোষারোপ আর তাঁরা শুনতে চান না। মানুষ বাঁচাতে সবাইকে একসঙ্গে মাঠে নামতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় চলতি বছরের রেকর্ড ২৮৫ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ২৩৭ ও ঢাকার বাইরের ৪৮ জন। এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে একজনের। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে ২৯ জনের মৃত্যু হলো। চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে ৪ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে চলতি মাসের ১৫ দিনেই ২ হাজার ৬৫ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি চিকিৎসাধীন ৯৩৭ জন।
এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে এক সেমিনারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। হাসপাতালে ক্রমান্বয়ে ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আমরা চাই, তারা আরও বেশি কাজ করুক, যাতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসে। যে পর্যন্ত রোগী বাড়তে থাকবে, সে সময় পর্যন্ত আমরা ভাবব– ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এখনও কাজের জায়গা রয়ে গেছে; গ্যাপ রয়ে গেছে। যেখানে স্প্রে করা হয়নি, এখনও বেশি (মশা) আছে, তা কমানো দরকার। যে ওষুধ ব্যবহার হচ্ছে, তা মানের কিনা- সেটাও দেখা উচিত।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জোবায়দুর রহমান বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে আমাদের কোনো ত্রুটি আছে কিনা, সেটি যথাযথভাবে স্বাস্থ্য বিভাগ কখনও জানায়নি। আমরা মশা নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। যে ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটি আইসিডিডিআর,বি, খামারবাড়ি ও ডিএনসিসির নিজস্ব ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়। সন্তোষজনক প্রতিবেদন পেলেই পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়। সেখান থেকে সন্তোষজনক ফল পেলেই কেবল ওষুধ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় ছিটানো হয়। মশা নিয়ন্ত্রণে বছরজুড়েই নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর ও মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা (অন্য বছরের তুলনায়) কয়েক গুণ। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে বর্ষা মৌসুম শুরু হয়নি; সে জন্য আমরা মনে করি, আগাম সতর্কতা ও প্রস্তুতি প্রয়োজন। সেটি আমরা এরই মধ্যে শুরু করেছি। আমরা দেশবাসীকে এ জন্য সচেতন করতে চাই, যাতে সবাই এই মৌসুমে নিজ নিজ জায়গা থেকে স্বাস্থ্যবিধি ও সতর্কতা মেনে চলেন।
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, এডিস মশার বংশবিস্তার রোধ ও ডেঙ্গুর প্রকোপ মোকাবিলায় সমন্বিত কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি। মাঝেমধ্যে শুধু ওষুধ ছিটিয়ে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। সরকার ও জনগণ মিলে করোনা মহামারির মতো জরুরি ভিত্তিতে সারাদেশে একটি পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা জরুরি।
এদিকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আগামী রোববার থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। অভিযানে এডিস মশার লার্ভা, মশা ও মশার বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়া গেলে স্থাপনার মালিকের বিরুদ্ধে আর্থিক দণ্ড বা কারাদণ্ড দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার ডিএসসিসিতে পদায়ন করা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে নগর ভবনে আয়োজিত বৈঠকে এ নির্দেশ দেন সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান।